Header Ads

সূরা কাহাফে লুকানো রহস্য ও দাজ্জাল

সূরা কাহাফে লুকানো রহস্য ও দাজ্জাল


কখনো ভেবে দেখেছেন কি কেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতি জুমু’আর দিন সূরা কাহাফ পাঠ করতে বলেছেন? আসুন জানার চেষ্টা করি,

এই সূরাটিতে মোট চারটি শিক্ষণীয় ঘটনা রয়েছে, 

১) আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসী যুবকদের ঘটনাঃ যা ছিল ঈমানের উপর পরীক্ষা:

সূরার শুরুতেই সেই গুহাবাসী যুবকদের ঘটনার বর্ণণা দেয়া হয়েছে যারা এমন একটি জনপদে বসবাস করত যার অধিবাসীরা ছিল অবিশ্বাসী ও সীমালংঘনকারী। কাজেই যুবকেরা সেই নষ্ট সমাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘এদের সাথে আর নয়’। তারা আল্লাহর প্রতি এবংআল্লাহর দীনের প্রতি ভালোবাসা থেকে উজ্জিবীত হয়ে সেখান থেকে হিজরত করলেন। আল্লাহ তাদেরকে গুহাতে আশ্রয় দিলেন এবং সূর্যালোক থেকে নিরাপদে রাখলেন। বহু বছর পর (প্রায় ৩০৯ বছর) যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গলো তাঁরা দেখলেন সেই জনপদের অবিশ্বাসী লোকেরা বিদায় নিয়েছে এবং ভালো লোকদের দ্বারা মন্দ লোকেরা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
শিক্ষাঃ ঈমানের উপর পরীক্ষা।


২) দুইটি বাগানের মালিকের ঘটনাঃ যা ছিল সম্পদের উপর পরীক্ষা। 


 একজন লোক যাকে আল্লাহ দুইটি প্রাচুর্যময় সুন্দর বাগান দিয়ে ধন্য করেছিলেন, কিন্তু লোকটি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে গেল এমনকি পরকালের অস্তিত্ব সম্পর্কে আল্লাহর ওয়াদার উপর সন্দেহ পোষণ করল। কাজেই, এই অকৃতজ্ঞ লোকটির বাগানকে আল্লাহ তায়ালা বধ্বংস করে দিলেন-সে অনুতপ্ত হল, কিন্তু ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং তার এই অসময়ের অনুশোচনা তার কোন উপকারে আসল না।
শিক্ষাঃ সম্পদের উপর পরীক্ষা। 

৩) খিজির ও মুসা আলাইহি সালাম এর ঘটনাঃ যা ছিল জ্ঞানের উপর পরীক্ষা:


যখন মূসা আলাইহি সালামের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “এই পৃথিবীতে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “আমি”…কিন্তু আল্লাহ তাঁর কাছে উন্মোচন করে দিলেন যে, এমন এক ব্যক্তি আছেন যাকে আল্লাহ তাঁর চেয়েও বেশি জ্ঞান দান করেছেন। মুসা আলাইহি সালাম সেই ব্যক্তির সাথে ভ্রমণ করলেন এবং দেখলেন, শিখলেন কিভাবে অনেক সময় আল্লাহ তাঁর অসীম জ্ঞানের কারণে এমন অনেক ঘটনা ঘটান যেগুলো আমাদের চোখে খারাপ বলে মনে হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেগুলো মানুষের ভালোর জন্যেই করা হয়।

৪) যুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের ঘটনা যা ছিল ক্ষমতার উপর পরীক্ষা

 সেই ক্ষমতাধর বাদশাহর ঘটনা যাকে একই সাথে জ্ঞান এবং ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল এবং তিনি সেই উভয় দানের শুকরিয়াস্বরুপ মানুষের উপকারে এবং কল্যাণে তা ব্যয় করতেন। তিনি জনপদের লোকদের ইয়াজুজ মাজুজ এর সমস্যার সমাধান করে দিলেন এবং একটি বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করে দিলেন।


সূরাটির মাঝামাঝি আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ইবলিসের কথা যে এই পরীক্ষাগুলোকে আরও কঠিন করে দেয়–
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا 
“যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম - ‘আদমকে সেজদা কর’, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে (অর্থাৎ ইবলিসকে) এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।”(সূরা কাহাফ, আয়াত : ৫০)

আসুন, এবারে জেনে নেয়া যাক, সূরা কাহাফ এবং দাজ্জালের মধ্যে কিসের সম্পর্ক?
শেষ সময়ে কিয়ামতের একটি বড় লক্ষণ হিসেবে দাজ্জাল আবির্ভুত হবে , সে এই চারটি ফিতনা একত্রে নিয়ে আসবে–

••► সে মানুষকে আদেশ করবে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার ইবাদত করে - [ঈমানের উপর পরীক্ষা]
.
••► তাকে বৃষ্টি বর্ষণ/ অনাবৃষ্টি সৃষ্টির ক্ষমতা দেয়া হবে এবং সে মানুষকে তার সম্পদ দিয়ে লোভ দেখাবে - [সম্পদের উপর পরীক্ষা]
.
••► সে মানুষকে পরীক্ষায় ফেলে দিবে তার ‘জ্ঞান’ এবং নানারকম সংবাদ প্রদান করে - [জ্ঞানের উপর পরীক্ষা]
.
••► সে পৃথিবীর এক বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে - [ক্ষমতার উপর পরীক্ষা]
:
:

কিভাবে আমরা এই সকল ফিতনা থেকে বাঁচতে পারি? সূরা কাহাফেই আছে এর উত্তর -

• ফিতনা হতে বাঁচার প্রথম উপায়ঃ সৎ সঙ্গ
.
“আপনি নিজেকে তাদের সৎসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না। (সূরা কাহাফ, আয়াত : ২৮)
:
:
• ফিতনা হতে বাঁচার দ্বিতীয় উপায়ঃ এই পার্থিব জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করা
.
“তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।” (সূরা কাহাফ, আয়াত : ৪৫)
:
:
• ফিতনা হতে বাঁচার তৃতীয় উপায়ঃ ধৈর্য্যশীল থাকা
.
“মূসা বললেনঃ আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না”। সূরা কাহাফ, আয়াত ৬৯)
:
:
• ফিতনা হতে বাঁচার চতুর্থ উপায়ঃ সৎ কর্ম সম্পাদন
.
“বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।.”(সূরা কাহাফ, আয়াত ১১০)
:
:
• ফিতনা হতে বাঁচার পঞ্চম উপায়ঃ আল্লাহর দিকে আহবান
.
“আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ২৭)
:
:
• ফিতনা হতে বাঁচার ষষ্ঠ উপায়ঃ পরকালের স্মরণ
.
“যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উম্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না। তারা আপনার পালনকর্তার সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবেঃ তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না। আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ৪৭-৪৯)
:
:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে যেন সকল প্রকার ফিতনা হতে রক্ষা করেন। আমিন।
:
:
পরিশিষ্টঃ
________
.
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে – যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে রক্ষা করা হয়; জামে তিরমিযীতে তিনটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে। সহীহ মুসলিমে শেষ দশটি আয়াতের বর্ণনা আছে। সুনান নাসায়ীতে সাধারণভাবে দশটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে। [ইবন কাসীর]
:
:
আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (মুসলিম : ১৭৬০ ইফা)
:
:
বারা ইবনে আযিব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এক ব্যক্তি ‘সূরা কাহাফ’ পড়েছিলো। সেই সময়ে তার কাছে মজবুত লম্বা দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এই সময় একখণ্ড মেঘ তার মাথার উপরে এসে হাজির হলো। মেঘ খণ্ডটি ঘুরছিলো এবং নিকটবর্তী হচ্ছিল। এ দেখে তার ঘোড়াটি ছুটে পালাচ্ছিল। সকাল বেলা সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঐ বিষয়টি বর্ণনা করলো। একথা শুনে তিনি বললেনঃ এটি ছিল (আল্লাহর তরফ থেকে) রহমত বা প্রশান্তি (সাকিনা) যা কুর’আন পাঠের কারণে নাযিল হয়েছিলো। (মুসলিম : ১৭৩৩ ইফা)
:
:
আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেছেন); রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে যেভাবে কুর’আন মাজীদের সূরা শিখাতেন ঠিক তেমনিভাবে এই দুয়াটিও শিখাতেন। দুয়াটি হলঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্না না’উযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম ওয়া আউযুবিকা মিন আযাবিল কাবর, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জাল, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতা”- হে আল্লাহ ! আমরা তোমার কাছে জাহান্নামের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আমি তোমার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আমি তোমার কাছে মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি তোমার কাছে জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। (মুসলিম : ইফা ১২২০)
:
:
মূলঃ "Muslim Heroes" থেকে অনূদিত
অনুবাদঃ সরল পথ
▂▂▂▂▂▂▂▂▂

No comments

Powered by Blogger.